“শেষনবী স্বশরীরে কবরে জেগে আছেন এবং সবকিছু দেখছেন” – ???

উপরিউক্ত আজগুবী এবং অত্যন্ত গর্হিত বিশ্বাসটি শয়তান এবং তাঁর দোসরদের দ্বারা নতুন করে বাজারজাত এবং বিপণন করা হচ্ছে।

১.
আল্লাহর শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (তাঁর উপর শান্তি)-এর জীবদ্দশায় মদীনাতে যখন তাঁর সঙ্গীদের (ছাহাবী) দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন, তখন তাঁর মধ্যে মক্কা থেকে আগত মুহাজির এবং মদীনার আনসারসহ আশেপাশের অনেকেই উপস্থিত থাকতেন।

আপাত দৃষ্টিতে এই ছাহাবীগণ সবাই মুসলিম হিসেবে সহাবস্থান করলেও এদের মধ্যে অনেকে ছিল কপটতা এবং মুনাফিকীতে সিদ্ধহস্ত। এদের বাইরের চেহারা এবং ব্যবহার থেকে শেষনবীও তাদের আসল রং ধরতে পারতেন না। সেই বিষয়টি খোলাসা করা হয়েছে সূরা তওবার ১০১ নং আয়াতে।

وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ

আর আরবদের মধ্যের যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের মধ্যে রয়েছে মুনাফিকরা, আবার মদীনার বাসিন্দাদের মধ্যেও – ওরা কপটতায় নাছোড়বান্দা। তুমি তাদের জানো না, আমরা ওদের জানি। আমরা অচিরেই তাদের দু’বার শাস্তি দেবো, তারপর তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে কঠোর শাস্তির দিকে। -৯:১০১

২.
কিয়ামতের দিন যখন সকল রাসূলগণকে একত্রিত করা হবে, এবং তাঁদেরকে প্রশ্ন করা হবে তাঁদের দাওয়াতের বিপরীতে তাঁদের কওম কী প্রতিক্রিয়া বা জবাব দিয়েছিল, তখন রাসূলগন কোন ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করবেন এবং বলবেন আলিমুল গায়িব আল্লাহই ভাল জানেন।

يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ قَالُوا لَا عِلْمَ لَنَا إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ

যেদিন আল্লাহ্ রসূলগণকে একত্রিত করবেন, তারপর বলবেন- তোমাদের কী জবাব দেয়া হয়েছিল? তাঁরা বলবেন – আমাদের কিছু জানা নেই, নিঃসন্দেহ তুমিই অদৃশ্য সন্বন্ধে পরিজ্ঞাত। -৫:১০৯

৩.
কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন হযরত ঈসাকে (তাঁর উপর শান্তি) প্রশ্ন করবেন, তিনি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর এবং তাঁর মাকে উপাস্য সাব্যস্ত করতে বলেছিলেন? জবাবে হযরত ঈসা বলবেন-

مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত। -৫:১১৭

এখানেও আমরা এই সত্যের স্বীকারোক্তি পাই যে, নবীর মৃত্যুর পর তিনি অবগত নন, তাঁর উম্মত কী করেছে। শেষনবীর উম্মতের ব্যাপারে কিয়ামতের ময়দানে শেষনবী নিজেও হযরত ঈসার এই একই আয়াতের উচ্চারণ করবেন বলে ‘হাদীসের’ বর্ণনায় দেখতে পাওয়া যায়। কুরআনের বহু আয়াত থেকেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করবার সুযোগ রয়েছে।

দুটি বিষয় এ তিনটি আয়াত থেকে পরিষ্কার হল যে,

এক. নবীগণ তাঁদের জীবদ্দশায় যাদেরকে দেখেছেন, তাদের চরিত্রের নিষ্কলুষতার ব্যাপারে তারা পূর্ণ ওয়াকিফহাল নন।

দুই. একইভাবে রাসূলগনের ওফাতের পর তাঁদের উম্মতের আমলের ব্যাপারেও তাঁদের কোন অবগতি নেই।

যে জাজ্বল্যমান সত্যটিকে আমরা শয়তানের প্ররোচনায় এইসব ভেজাল দ্বারা ঢেকে দিতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষন করছেন; তিনি আমাদের ভেতর-বাহিরের যাবতীয় খবর রাখেন – সেই মহাসত্যটিকে ভুলিয়ে দেয়া।

শয়তানদের থেকে পানাহ চাই; পরাক্রমশালী আল্লাহর আশ্রয় চাই।

Abu Sayeed Khan


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.