কুরআনের বর্ণনা অনুসারে আখেরাতে আল্লাহ কম বা বেশি প্রায় ২৬ / ২৭ টি প্রশ্ন করবেন, তবে আরও প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি এখানে ক্বুরআন থেকে ২৭ টি প্রশ্নের কথা তুলে ধরেছি, কিন্তু সাধারনভাবে যারা ধর্মের তত্ত্বকথা প্রচার করেন, ধর্মের কথা বলে পারিশ্রমিক নেয় এই প্রশ্নগুলোর কথা আমাদেরকে শুনায় না এবং বলেও না। এখানে প্রশ্নগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করলাম। পুরো আয়াত ক্বুরআনের সাথে মিলিয়ে পড়ুন।
(১) প্রশ্ন করা হবে কান, চক্ষু ও অন্তর সম্পর্কে। ছূরা বনি ইছরাঈল ১৭, আয়াত ৩৬।
(২) ক্বুরআন সম্পর্কে সকলকে প্রশ্ন করা হবে। ছূরা ঝুখরুফ ৪৩, আয়াত ৪৪। (আমাদের ভেবে দেখার বিষয় যে, যখন আল্লাহ প্রশ্ন করবেন যে, তোমাদের জীবন ব্যবস্থার জন্য আমি যে ক্বুরআন দিয়েছিলাম তা কি পড়ে দেখেছো? তখন কি উত্তর দেয়া হবে?)।
(৩) প্রশ্ন করা হবে মুত্তাক্বীদেরকে যে, তোমাদের রব কি নাযিল করেছিলেন? তারা বলবেঃ মহা কল্যাণ। (অর্থাৎ ক্বুরআন) ছূরা নাহল ১৬, আয়াত ৩০।
(৪) প্রশ্ন করা হবে আয়াত সম্পর্কে, তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনানো হত না? ছূরা মু’মিনুন ২৩, আয়াত ১০৫-১০৬।
(৫) প্রশ্ন করা হবে আয়াত সম্পর্কে যে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য হতে রছূলগণ আসেনি যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করতেন? ছূরা আন’আম ৬, আয়াত ১৩০।
(৬) প্রশ্ন করা হবে, আয়াত প্রত্যাখ্যান করে অন্যকিছু করেছিলে কি? ছূরা নামল ২৭, আয়াত ৮৪।
(৭) প্রশ্ন করা হবে, আয়াত না মেনে অহংকার করেছিলে কি? আমার আয়াতগুলো কি তোমাদের কাছে পাঠ করা হয়নি? ছূরা যাছিয়া ৪৫, আয়াত ৩১। (লক্ষ্য করুন, আল্লাহ অন্য কোনো বাণীর কথা জিজ্ঞাসা করবেন না)।
(১০) জাহান্নামের রক্ষি ফেরেস্তারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। ছূরা যুমার ৩৯, আয়াত ৭১।
(৮) প্রশ্ন করা হবে সমস্ত মানুষকে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে। এবং সমস্ত রছূলগণকেও আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে। ছূরা আ’রাফ ৭, আয়াত ৬।
(৯) প্রশ্ন করা হবে যে, তোমরা রছূলগণকে কী জবাব দিয়েছিলে? ছূরা ক্বাছাছ ২৮, আয়াত ৬৫। (যারা বর্তমানে রছূলের রেখে যাওয়া কিতাব ক্বুরআনকে বুঝে বুঝে পড়ে না, বুঝে না, সে মুলতঃ ক্বূরআন প্রত্যখ্যান করলো এবং সে রছূলকেও প্রত্যাখ্যান করে রছূলকে না জবাবই দিয়ে দিলো)।
(১১) প্রশ্ন করা হবে মিথ্যা উদ্ভাবন সম্পর্কে এবং যারা নিজেদের পাপের বোঝা এবং অন্যের পাপের বোঝাও বহন করবে তাদেরকেও। ছূরা আনকাবূত ২৯:১৩, আয়াত ১৩।
(আলোচনাঃ কেউ কেউ ইছলামের মধ্যে বা ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন মিথ্যা বিধান উদ্ভাবন করেছে, আবার কেহ কেহ তা শক্ত করার জন্য রছূলের নামও ব্যবহার করেছে, এই সমস্ত বিষয়ও আল্লাহ সেদিন প্রশ্ন করবেন)।
(১২) প্রশ্ন করা হবে সম্পদ ও মিথ্যা উদ্ভাবন সম্পর্কে। আল্লাহ নিজেই নিজের শপথ করে বললেন যে, তাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে। ছূরা নাহল, ১৬, আয়াত ৫৬।
(১৩) প্রশ্ন করা হবে নিয়ামত, রিযিক, প্রাচুর্য ও সম্পদ সম্পর্কে। ছূরা তাকাছুর ১০২, ১-৮।
আলোচনাঃ এ পৃথিবী আল্লাহর, এ পৃথিবীর সমস্ত সম্পদও আল্লাহর, মানুষ মরে যায় আল্লাহর এ পৃথিবীর সম্পদ এ পৃথিবীতেই থেকে যায়। কিছুদিনের জন্য মানুষকে আল্লাহ যে সম্পদের অধিকারী করেছিলেন সেই সম্পদ থেকে যাকাত, ছদকা, দান, করজে হাছানাসহ আল্লাহর পথে আল্লাহর হুকুম মতো ব্যয় করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে।
(১৪) প্রশ্ন করা হবে ভোগবিলাসপূর্ণ জীবন সম্পর্কে। যেমন- ভোগবিলাসপূর্ণ জীবনধারণ, গল্পগুজব, বিত্ত সম্পদশালীরা আল্লাহর আয়াতের প্রতি অহংকার, এবং আল্লাহর বাণী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করে অন্য যা কিছু মান্য করে চলে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই প্রশ্ন করবেন)। ছূরা মু’মিনুন ২৩, আয়াত ৬৪-৬৮।
(যাকাত, ছদকা ও করজে হাছানা না দিয়ে যারা সম্পদকে কুক্ষিগত করে রাখে ও ইচ্ছা মত খরচ করে সেইসমস্ত বিত্তশালী বা সম্পদশালীদেরকেও আল্লাহ প্রশ্ন করবেন)।
(১৫) প্রশ্ন করা হইবে, মানুষ যা কিছু করে সে সম্পর্কে। ছূরা নাহল ১৬, আয়াত ৯৩।
(১৬) প্রশ্ন করা হবে সকলকে তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে। এই আয়াতে আল্লাহ নিজেই নিজের কছম করে কথাটা বলেছেন)। ছূরা হিজর ১৫, আয়াত ৯২:৯৩।
(১৭) প্রশ্ন করা হবে দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে যে, জীবনে সৎকর্ম করেছো কিনা? ছূরা ফাতির ৩৫, আয়াত ৩৭।
(১৮) প্রশ্ন করা হবে এতিমের সম্পদ ও অঙ্গিকার বা ওয়াদা সম্পর্কে। ছূরা বনি ইছরাঈল ১৭, আয়াত ৩৪।
(২৬) প্রশ্ন করা হবে কিয়ামত সম্পর্কে। এটা (কিয়ামাত) কি সত্য নয়? ছূরা আন’আম ৬, আয়াত ৩০।
আলোচনাঃ এক শ্রেণীর মানুষ আল্লাহ ও কিয়ামতকে সরাসরি অস্বীকার করে, যাদেরকে বলা হয় নাস্তিক বা কাফের। আর এক শ্রেণী যারা মুখে মুখে বলে আমরা আল্লাহ এবং কিয়ামত বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহর কিতাব বুঝে বুঝে পড়ে না, ক্বুরআন অনুযায়ী ছালাত ও যাকাত আদায় করে না, বরং বিশ্বাস করি বলে আল্লাহর সাথে তারা তামাশা করে, এবং দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তারা মুলতঃ কিয়ামত বিশ্বাস করে না। (আল্লাহ বলেন, যাকাত না দিলে সে আখেরাতকেও অস্বীকার করে- ছূরা হামীম ছিজদা আয়াত ৭)।
(২২) প্রশ্ন করা হবে, ‘আমার শরীকরা কোথায়? যারা শিরক্ করতো। ছূরা নাহল ১৬, আয়াত ২৭।
(২৩) প্রশ্ন করা হবে, ‘আমার শরীকরা কোথায়? যারা শিরক্ করতো। ছূরা ক্বাছাছ ২৮, আয়াত ৬২।
(২৪) প্রশ্ন করা হবে, ‘আমার শরীকরা কোথায়? যারা শিরক্ করতো। ছূরা ক্বাছাছ ২৮, আয়াত ৭৪।
(২৫) প্রশ্ন করা হবে ‘আমার শরীকরা কোথায়? যারা শিরক্ করতো। ছূরা হামীম ছিজদা ৪১, আয়াত ৪৭।
আলোচনাঃ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর সমতুল্য করে অন্যকিছুর এবাদাত করে এবং আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহর বিধান জীবন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে মানব রচিত দ্বীন দিয়ে যারা জীবন পরিচালনা করে এই সমস্ত কিছুই আল্লাহর শরীক বা শিরক্ করা হয়। কারণ, আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহ নভমন্ডল ও ভুমন্ডলের মালিক, তাঁর রাজত্বে কোনো অংশিদার নেই।
(২০) প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? অর্থাৎ হিজরত করনি কেনো? যমিন কি প্রশস্ত ছিল না? ছূরা নিছা ৪, আয়াত ৯৭।
(১৯) প্রশ্ন করা হইবে ফেরেস্তাদেরকে, মানুষের এবাদাত সম্পর্কে। ছূরা ছাবা, ৩৪, আয়াত ৪০।
(২১) প্রশ্ন করা হবে ঈছাকেও। তুমি কি বলেছিলে যে, তোমরা আমার এবং আমার মায়ের এবাদাত করো? ছূরা মায়িদা ৫, আয়াত ১১৬।
(২৭) প্রশ্ন করেন আল্লাহ। আল্লাহ বলেনঃ তখন কেমন দশা হবে? যখন ফেরেশতারা তাদের মুখে আর পিঠে মারতে মারতে তাদের জান কবজ করবে। ছূরা মুহাম্মাদ ৪৭, আয়াত ২৭-২৮।
[৬:৯৪] (সেদিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছো, আমি তোদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা তোমরা পিছনেই রেখে এসেছো। (অর্থাৎ ক্বুরআন)। ছূরা আন’আম আয়াত ৯৪।
[১৮:৪৭] (আল্লাহ বলেন) আমি মানুষকে একত্রিত করবো অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়বো না। ছূরা কাহাফ আয়াত ৪৭।
আলোচনাঃ আল্লাহ কাউকে ছাড়বেন না, কাজেই আসুন, আমরা সকলে পরকালের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ক্বুরআন বুঝে বুঝে পড়ি, প্রস্তুতি গ্রহণ করি, আল্লাহর কিতাব ক্বুরআনকে আঁকড়ে ধরি, ক্বুরআন এর বিধান দিয়ে জীবন গড়ি।
Credit: এ বি কামাল