জীবন তো একেই বলে!

১.

“দোস্ত জীবনে একবার সুযোগ পাইলেই আমি Christ the Redeemer দেখতে রিও ডি জেনিইরো যামু। টাকা পয়সা কামায়া লই।”

ছন্নছাড়া, বোহেমিয়ান এক ছেলে তারই সমগোত্রীয় বন্ধুকে বলেছিল একদিন। ছেলেটির কাছে জীবন মানে ছিল বন্ধু আড্ডা, গান আর স্বপ্নের সাগরে তলিয়ে যাওয়া। জীবনের উদ্দেশ্য ছিল একটা জ্বলজ্বল করা সিজিপিএ, একটা স্যুটেড-বুটেড জব আর মিউসিক-মুভির শৌখিন জীবন। এই তো! জীবনে আর কীই বা চাওয়ার ছিল? বাপের টাকায় হ্যাং আউট আর রাত দুপুরে আড্ডাবাজি। জীবন তো একেই বলে!

অনেক দেরিতে হলেও ছেলেটা বুঝতে পারে একটা ব্ল্যাক হোলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। আস্তে আস্তে। চুম্বকের ন্যায় তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই ব্ল্যাক হোল। অদৃশ্য কেউ যদি প্রতিনিয়ত তার কানের কাছে বলে যেতো, নাহ! জীবন একে বলে না।

সে যা করতো, যা ভাবতো, যা বলতো – তার খুব অল্পই ছিল তার সৃষ্টিকর্তার পছন্দের। প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহূর্তে বেহায়া, বেশরম আর নির্লজ্জের মত তার স্রষ্টার সাথে সে বিশ্বাসঘাতকতা করতো। সে বলতো আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, কিন্তু তার নফসকে সে ইলাহ বানিয়ে ফেলেছিল। সে নিজের সাথেই প্রতারণা আর প্রবঞ্চনা করে বেড়াতো। কী ভয়ংকর!

ছেলেটা কখনো অবাক হয়ে ভাবতো, সে কোনদিন স্কুলে ইউনিফর্ম ছাড়া যায়নি। কেন যায়নি? কারণ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কড়া নির্দেশ ছিল। ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে এলে, স্কুলের কোন আইন ভাঙলে পিঠে একাধিক বেত ভাঙ্গা হবে। সে ভীত ছিল। তাই যতদিন স্কুলে ছিল, সে স্কুলের নিয়ম মেনে চলতো।

সে হিসাব মেলাতে চাইলো। আচ্ছা, এই পৃথিবীর প্রধানও তো আছেন একজন। ছেলেটির ওপর যার অধিকার। যার নজরদারি। যার অথরিটি। সে কি তার নিয়ম মেনে চলছে? তার আদেশ নিষেধ মানছে?

নাহ।

কেন মানছে না? স্কুলে যে তবে প্রধান শিক্ষকের কথা মেনে চলতো? শাস্তি হবে দেখে?

তবে আল্লাহও তো বলেছেন শাস্তি হবে। প্রতিটা অণু পরিমান কাজের হিসেব হবে। শাস্তি হবে।

ছেলেটা এনালজি করতো। গা শিউরে ওঠা এনালজি।

২.

সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। ছেলেটা এখন আর রিও ডি জেনিইরো যেতে চায়না। কষ্ট করে কিছু অর্থ যোগাড় হলে আল্লাহ চাইলে সে ভো দৌড় দিতে চায় বাইতুল্লাহর দিকে। একটা বার সে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে। একটাবার ইব্রাহিম (আ), ইসমাইল (আ) এর স্মৃতিতে ভাস্মর সেই বাইতুল্লাহ দেখতে চায় ছেলেটা। একটাবার দৌড়াতে চায় বিবি হাজরার মত সাফা মারওয়ার মাঝে। একটাবার সে দেখতে চায় সেই হিরা গুহা, যেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটা দিনের পর দিন কাটিয়েছেন শুধু একটা আলোর জন্যে। একটাবার সে দেখতে চায় তার রাসূলের মাসজিদটা। সেই মাসজিদটা। যেখান থেকে সুপারনোভার মত ছড়িয়ে পড়েছিল দ্বীন আল হাক্ক!

ছেলেটা একটাবার তার রাব্বকে বলতে চায় “লাব্বাইক!”

জীবন তো একেই বলে!

index

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.