আসলে ওরা কি কখনো আল্লাহর বাণীকে বোঝার চেষ্টা করে নি?

কুরআনের ২৩তম সুরা, সুরা মু’মিনুনে বিশ্বস্রষ্টা বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন আমাদের বিবেকের কাছে যার কিছু এখানে তুলে ধরা হলো (বোল্ড করা):

৫৫-৫৬. ওরা কি মনে করে যে, ওদের যে (যোগ্যতা, মেধা, কর্মক্ষমতা) সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দান করেছি, তা শুধু বৈষয়িক সাফল্য লাভে প্রতিযোগিতা করার জন্যে? এটাই সৎকর্ম? না, তা নয়! ওরা আসলে বুঝতে পারছে না (এটাই ওদের একটা পরীক্ষা)!

৫৭-৬১. আসলে যারা তাদের প্রতিপালকের (বিরাগভাজন হওয়াকে) ভয় করে, যারা তাঁর বাণীকে বিশ্বাস করে, যারা তাঁর সাথে কাউকে শরিক করে না, যারা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে — এই বিশ্বাস নিয়ে কম্পিত হৃদয়ে অন্তর থেকে দান করে, তারাই সৎকর্মে (নিজের সাথে) আসল প্রতিযোগী, তারাই সৎকর্মে অগ্রগামী।

৬২. (হে মানুষ!) আমি কারো ওপরই সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করি না। কে কতটুকু করতে পারবে বা পারবে না, আমার লিপিকায় তা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে। কারো ওপরই অন্যায় করা হবে না। ৬৩-৬৪. আফসোস! (ধর্মের একত্বকে যারা ছিন্নভিন্ন করেছে) তাদের অন্তর অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন। (ধর্মের একত্বকে ছিন্নভিন্ন করা ছাড়াও) তাদের আমল আরো খারাপ। তারা তাদের এই অপকর্ম অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তাদের মধ্য থেকে ভোগবিলাসে নিমজ্জিতদের কঠিন আজাবে পাকড়াও করব। তখন তারা আর্তনাদ করে আমার কাছে প্রার্থনা করবে।

৬৫-৬৭. তখন তাদের বলা হবে, ‘আজ আর্তনাদ বা প্রার্থনা করে কোনো লাভ নেই। তোমরা আজ নিষ্কৃতি পাবে না। আমার বাণী যখন তোমাদের শোনানো হতো, তখন তোমরা কেটে পড়তে। আর দম্ভভরে এগুলো নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অবাস্তব অর্থহীন আলোচনা ও গালগল্পে সময় কাটাতে।’

৬৮. আসলে ওরা কি কখনো আল্লাহর বাণীকে বোঝার চেষ্টা করে নি? নাকি ওদের কাছে এমন কিছু নাজিল হয়েছে, যা ওদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসে নি? ৬৯. অথবা ওরা কি ওদের রসুল সম্পর্কে কিছু জানে না বলে তাকে অস্বীকার করছে? ৭০. বা ওরা কি বলে, সে উন্মাদ? না, তা নয়। আসল সত্য হচ্ছে, রসুল ওদের কাছে সত্যবাণী নিয়ে এসেছে আর ওদের অধিকাংশই এ সত্যকে অপছন্দ করে।

৭১. আসলে সত্যধর্ম যদি ওদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতো, তবে মহাকাশ ও পৃথিবী এবং এর মধ্যে অবস্থিত সবকিছুই তছনছ হয়ে যেত। অথচ (এ ওহীর মাধ্যমে) আমি তো ওদের কল্যাণের জন্যেই উপদেশ দিয়েছি। কিন্তু (কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই) ওরা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

৭২. অথবা (হে নবী!) তুমি কি ওদের কাছে কোনো প্রতিদান চাও? তোমার জন্যে তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই উত্তম এবং তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।

৭৩-৭৪. (হে নবী!) তুমি অবশ্যই ওদের সাফল্যের সরলপথে ডাকছ। কিন্তু যারা আখেরাতে জবাবদিহিতার বিষয় মেনে নিতে অস্বীকার করবে, তারা সাফল্যের পথ থেকে বিচ্যুত হতে বাধ্য। ৭৫. আমি ওদের দয়া করলেও, বর্তমান বিপদ মোচন করলেও ওরা অবাধ্যতার বিভ্রান্তিতেই ঘুরপাক খাবে। ৭৬. আমি ওদের বালা-মুসিবতে নিমজ্জিত করেছি, কিন্তু ওরা প্রতিপালকের সামনে বিনত হয় নি বা কাতর প্রার্থনাও করে নি। ৭৭. (পরকালে) যখন ওদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির দরজা খুলে দেবো, তখন ওরা নিমজ্জিত হবে জমাট হতাশা ও হা-হুতাশে।

৭৮. (হে মানুষ! আল্লাহর কথা শোনো! কারণ) তিনি তোমাদেরকে দেখা ও শোনার শক্তি দিয়েছেন, বিচার-বিবেচনা করার জন্যে দিয়েছেন মন (চিন্তা করার শক্তি)। তারপরও তোমরা কত কম শুকরিয়া আদায় করো! ৭৯. তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে আধিপত্য দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত তোমরা তাঁর কাছেই সমবেত হবে। ৮০. তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান। রাত ও দিনের আবর্তন তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। এরপরও কি তোমরা তোমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করবে না?


৯৯-১০০. (যারা আখেরাতকে অস্বীকার করে আত্মপ্রবঞ্চনায় লিপ্ত) তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হলে কাতর প্রার্থনা করে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠাও, যাতে আমি কিছু সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি পূর্বে কখনো করি নি।’ কিন্তু কখনো নয়, তা হওয়ার নয়। কারণ মৃতের সাথে জীবনের একটি অন্তরায় থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।

১০১-১০৪. পুনরুত্থানের জন্যে যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, সেদিন কোনো আত্মীয়তা থাকবে না, কেউ কারো খোঁজ নেবে না। যাদের (সৎকর্মের) পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফল। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের বিনাশ করেছে, তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সেখানে ওরা থাকবে চিরকাল। আগুনে ওদের মুখ ঝলসে হবে বীভৎস।

১০৫. (তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) কেন, তোমাদের সামনে কি আমার বাণী পাঠ করা হয় নি? কেন তোমরা তখন তা অগ্রাহ্য করেছিলে? ১০৬-১০৭. ওরা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্যের শৃঙ্খলে আমরা বন্দি ছিলাম ও আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করো। এরপর যদি কখনো সত্য অস্বীকার করি, তবে নিশ্চয়ই আমরা জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’

১০৮. আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা এখন লাঞ্ছনা ভোগ করতে থাকো। আমাকে কিছু বলে কোনো লাভ নেই।’

১০৯. স্মরণ করো! আমার বান্দাদের মধ্যে একদল প্রার্থনা করত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদের ক্ষমা করো, তুমি আমাদের দয়া করো। তুমিই করুণানিধান।’ ১১০. কিন্তু তাদের নিয়ে তোমরা হাসিতামাশায় এত বিভোর থাকতে যে, আমার কথাই তোমরা ভুলে যেতে। হায়! তোমরা তাদের নিয়ে শুধু হাসিতামাশাই করেছ। ১১১. কিন্তু বিশ্বাসীদের ধৈর্যের জন্যে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম, তারাই আজ সফল।

১১২-১১৩. আল্লাহ তখন (সাজাপ্রাপ্তদের) জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা পৃথিবীতে কত বছর ছিলে? ওরা বলবে, একদিন বা তার কম সময়। আপনি বরং যারা সময় গণনা করতে জানে, তাদের জিজ্ঞেস করুন। ১১৪. আল্লাহ বলবেন, আসলে তোমরা খুব অল্প সময়ই পৃথিবীতে ছিলে। (আফসোস! তোমাদের পার্থিব আয়ুষ্কাল যে এত অল্প) একথা যদি সেদিন বুঝতে! ১১৫. তোমরা (কত নির্বোধের মতো) মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না।

১১৬. (এখন বুঝতেই পারছ) আল্লাহ মহান! সর্বশক্তিমান! তিনিই চূড়ান্ত সত্য! তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি মহিমান্বিত আরশের একাধিপতি। ১১৭. যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে, কোনো সনদ ছাড়াই অন্য উপাস্যের উপাসনা করে, তার হিসাব তার প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। এ ধরনের সত্য অস্বীকারকারীরা কখনো সফল হবে না!

১১৮. অতএব (হে বিশ্বাসীগণ! কায়মনোবাক্যে) প্রার্থনা করো, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমায় ক্ষমা করো! আমায় দয়া করো! তুমিই সত্যিকার দয়াময়!’


অনুবাদ উৎস:আল-কোরআন বাংলা মর্মবাণী | কোয়ান্টাম মেথড
কোরআনের বাণীকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অনন্য প্রকাশনা আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী। কোরআনের মর্মার্থ…alquran.org.bd


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.