সেখানে কেউ মিথ্যে বলে না, গালি দেয় না…

এক চায়ের দোকানে এসে বসেছি। চা আসার অপেক্ষা। সামনেই তিন চারজন লোক খোশগল্প করছে। খোশগল্প না বলে আসলে গালিগালাজ করছে বলা যায়। কারো প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে কিংবা কোন ব্যক্তিকে গালিগালাজ করছে এমন কিন্তু না, হুদাই কথায় কথায় কুৎসিত, কানে আঙুল দেওয়া লাগে এমন সব গালি। সেদিন বাড়িতে ছিলাম ছুটিতে। সাথে আরও কয়েকজন ছিলো। একে অন্যের সাথে কথা বলছিলো, সেই একই অবস্থা, কোন কারণ ছাড়াই মা বাপ তুলে এমন কুৎসিত সব গালি! আমরা যেমন বলি,অমুক ভাই, অমুকের ছেলে, ঠিক তেমনি এরা সেই অমুকের মা-বাপ তুলে একটা কুৎসিত গালি দিয়ে, তবেই তাকে সম্বোধন করে। 


রাস্তা ঘাটে, পাবলিক বাসে, রিকশায় চড়তে গেলে দুই রিকশাওয়ালার মাঝে…এসব গালি, কুৎসিত কথা, নোংরা ভাষা আমাদের নিত্য সঙ্গী। আমাদের মনের অজান্তেই আমাদের হৃদয়ে এসবের একটা প্রভাব আছে। মুমিনের অন্তরে এর প্রভাব আরও বেশী। মিথ্যা শুনলে আমাদের খারাপ লাগে, বাজে কথা, গালমন্দ এসব আমাদের মন খারাপ করে। মিথ্যা কথা বলতে আমাদের ভালো লাগে না, কিন্তু কেন? কারণ আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলার জন্য তৈরি করা হয়নি। এটা আমাদের ফিতরাত বিরুদ্ধ। কিন্তু চারপাশে মানুষ যে এত অনায়াসে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে? তাদের ফিতরাত নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই নষ্ট ফিতরাতে ভরা মানুষের ভিড়ে অল্প কিছু ফিতরাতওয়ালা মানুষের অবস্থা ডাঙায় তোলা মাছের মত, হাপড়াতে থাকে। 
আর তাই আমাদের রব তাঁর বান্দাদের জন্য এমন জান্নাতের কথা বলেছেন যেখানে কোন গালিগালাজ নেই, যেখানে কেউ মিথ্যা কথা বলে না, যেখানে কোন অসার, অর্থহীন কথাও কেউ বলবে না। যেখানে কুৎসিত গালি শুনে কারো মন খারাপ হবে না। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন,
ﻳَﺘَﻨَﺎﺯَﻋُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻛَﺄْﺳًﺎ ﻻ ﻟَﻐْﻮٌ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻻ ﺗَﺄْﺛِﻴﻢٌ”তারা পরস্পরের মধ্যে পানপাত্র বিনিময় করবে; সেখানে থাকবে না কোন বেহুদা কথাবার্তা এবং কোন পাপ কাজ।” (সূরাহ আত-তুর, ৫২:২৩)
.ﻓِﻲ ﺟَﻨَّﺔٍ ﻋَﺎﻟِﻴَﺔٍ ﻻ ﺗَﺴْﻤَﻊُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻻﻏِﻴَﺔً”সুউচ্চ জান্নাতে। সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার বাক্য।” (সূরাহ গাশিয়াহ, ৮৮: ১০-১১)
ﻻ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟَﻐْﻮًﺍ ﻭَﻻ ﻛِﺬَّﺍﺑًﺎ”তারা সেখানে শুনবে না কোন অসার ও মিথ্যা কথা।”(সূরাহ আন-নাবা, ৭৮: ৩৫) 
ﻻ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟَﻐْﻮًﺍ ﻭَﻻ ﺗَﺄْﺛِﻴﻤًﺎ ﺇِﻻ ﻗِﻴﻼ ﺳَﻼﻣًﺎ ﺳَﻼﻣًﺎ”তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, ‘সালাম, সালাম’।” (সূরাহ ওয়াকিয়া, ৫৬: ২৫-২৬) 
দুনিয়ার যা কিছু কষ্টের, মন খারাপের, শূন্যতার, তার বিপরীতে জান্নাতের আনন্দ, সুসংবার আর অফুরন্ত নেয়ামতের প্রতিশ্রুতি আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে। এমনকি খারাপ কথা, নোংরা বাক্য শুনে মুনিনের মন খারাপ হয়, এই মানসিক কষ্টের ব্যাপারটিও আল্লাহ্‌ উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতে এসব থাকবে না। সুবহানআল্লাহ্‌! এমন এক জান্নাতে যেতে না পারলে এর চেয়ে বড় আফসোস আর কী হতে পারে!


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.