জীবনের ২১ বসন্ত

জীবনের ২১ টি বসন্ত পার করলাম! বুঝমান হওয়ার পর থেকেই ভিন্নধর্মীর আবর্তনে ভেসে যাওয়া এই মূল্যবান কয়েকটি বছরে বহুবার দেখে শিখেছি সবকিছুতেই honey থেকে hemlock এর রূপান্তর। বিদ্রোহ আর ভিন্নতা দিয়ে সাজানো আমার এ দিন রাত্রী! এই ৭৬৭১ দিনে ঠিক ৭৬৭১ বার সূর্য্য নামের চমৎকার কিন্তু হৃদয়হীন রাহুর চারপাশে আমার এই স্নিগ্ধ পৃথিবী অযথায় ঘুরে গেল! বোকা পৃথিবীটার অহর্নীশ চেয়ে থাকা দেখে বলতে ইচ্ছে হয়, “হায় বিদ্রোহ! তুমিই বুঝি দীপ্তিহীন আগুণ যে কিনা আলো দিতে জানেনা, জানে কেবল দহন করতে!” ১৮৪১০৪ ঘন্টা পেরিয়ে ভাবছি, ভিন্নভাবে যাপন করে যাওয়া এই জীবনের কি সত্যিই কোন প্রয়োজন ছিলো? যখন ৬৬২৭৭৪৪০০ সেকেন্ড অতিক্রম করেই গেলাম তখন পরিচিত অথবা অপরিচিত বন্ধু সকলকে সকাল সকাল একটা উপদেশ দিয়ে যাই, “ধৈর্য্যহারা হইও না, সময়মত সবকিছু এমনিই ধরা দিবে”।

আমার বিকলাঙ্গ, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মন কেবলই ঘ্যান ঘ্যান করে যায়, “জীবনের মানে শুধুই যদি প্রাণরসায়ন, তবে জ্যোৎস্না রাতে ব্যাকুল কেন আমার এ মন!” কেন যেন মন ও মগজে প্রণয়ের মৌমাছিটা নির্লজ্জের মত প্রতি মাইক্রোসেকেন্ডে স্মরণ করিয়ে অনুতপ্ত করিয়ে দেয় কিছু বছর পূর্বের ঘটে যাওয়া সময়ের কর্মকান্ডগুলো।”

উপলব্ধি করলামঃ “কোন ব্যাক্তি যখন পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল মৌলিক ভাবে অনুধাবন করতে পারবে, তখন সে ব্যাক্তি পৃথিবীর জন্য হুমকি অথবা রহমত স্বরূপ। একজন লোকের কাছে যদি কোন ক্ষমতা হাতে পাওয়াটাকে সোনার হরিন মনে হয়, আর সে সেটা যখন পেয়েও যায় তখন তার জীবন-মরণ চাওয়া-পাওয়া হয় ‘ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকা। আর এই বেঁচে থাকতে গিয়ে কেউ বেঁছে নেয় মানুষের অন্তর; কেউ বেঁছে নেই মানুষের অন্তরের ধিক্কার। তবে যা দেখলাম… হয়তো অনেক মানুষদের মন জয় করে নিয়েছি।

—————————————————————————-

অন্যান্য বছরের বার্থডে’র থেকে এ বছরের বার্থডে আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ। কারণ আমি আগের সেই দুরন্তপনা কিশোর নেই; বিবাহিত। আগের মত স্বাধীনতা নেই, যখন যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারিনা। অনেক কিছুই হিসেব করে কতে হয়। সব কিছু মিলিয়ে জীবন একটা নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো বাক্সের ভেতরের মানুষ না। যদিও চিন্তা চেতনা বাক্সের বাইরের তবুও যেহেতু বাক্সবন্দী হয়ে গেছি তাহলে এবার জীবনের সিদ্ধান্ত এখানেই নিতে হবে। সম্ভবত এখান থেকে জাগতিক সকল কিছু থেকে সহধর্মীনীকে সাথে নিয়ে ইউটার্ণ নেওয়ার সময় এসে গেছে। এখন আর একা ইউটার্ণ নেওয়া সম্ভব না কারণ দুটি দেহ একটি আত্মায় রূপান্তর হয়ে গেছে অল্পকদিনেই।

পথ চলতেই হবে …… এ এক অনন্ত যাত্রা…… ‘প্যাকাডিলো’ শব্দটার অর্থ শব্দটার অর্থ হচ্ছে ‘ক্ষুদ্র পাপ’। শব্দটা এসেছে ‘প্যাকাস’ থেকে যার অর্থ ‘ত্রুটিপূর্ণ পা’, যে পা দিয়ে কোন পথে যাত্রা করা সম্ভব না। প্যাকাডিলোকে ঠিক করার উপায় একটাই-সামনে এগিয়ে চলা, যেকোন নতুন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া। জীবনের আশীর্বাদগুলো গ্রহণ করা।

আমি পারিনা আমার একান্ত নিজস্ব জগতে যেতে। আমার ছিলো না পিছুটান কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই পিছুটান অনুভব করতে হয়। কিন্তু আমি আদর্শগতভাবে যে পথের পথিক, বাক্সের ভেতরে থেক আবার পথ হারিয়ে ফেলবো না তো? মাঝে মাঝে অনুভব হয় যেন সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্যা অ্যালকেমিস্ট’ বইয়ের এই কথাটা আবার একটু শক্তি যোগায় “that at a certain point in our lives, we lose control of what’s happening to us, and our lives become controlled by fate. that’s the world’s greatest lie. this planet: whoever you are, or whatever it is that you do, when you really want something, it’s because that desire originated in the soul of the universe. it’s your mission on earth.”  অর্থ্যাৎ “আমাদের একেকজনের জীবনের এক একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে আমাদের আশেপাশে যা আছে তার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। তখন জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভাগ্য। এটাই দুনিয়ার সবথেকে বড় মিথ্যে। তোমার আত্মা তোমার ইচ্ছাকে প্রস্তুত করে এটা শেখায় গ্রহের সব থেকে বড় সত্যিটা, তুমি যেই হওনা কেন, যাই কর না কেন, যখন সত্যি সত্যি মন থেকে কিছু চাইবে, চাও এ কারণে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভেতর থেকেই ইচ্ছা জেগে উঠে তোমার ভেতরে। পৃথিবীর বুকে এটাই তোমার অভিজান”।

যাইহোক,

“Today you are you, that is truer that true. There is no one alive who is Youer than you”. -Dr. Seuss

এই অল্প দিনের দুনিয়ার সফরে চড়াইউৎরাই করেই পার করতে হবে এই চূড়ান্ত সত্য। জানি না কতদিন বেঁচে থাকবো তবে মাঝে মাঝে মনে হয় আমার সময় বেশি নেই। যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন যাতে আমার স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং তার দাসত্বে নিয়োজিত থাকতে পারি এই কামনা-ই করি।

হে আমার প্রতিপালক আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তো তারই কাঙাল’

সর্বশেষ উপলব্ধি হলোঃ

রেস্পন্সিবিলিটি ছেলেদেরকে ‘পুরুষ’ বানায়। শুধু প্যান্ট পরা অর্থে পুরুষ নয়, বাস্তব অর্থে। তার চিন্তা-চেতনায় ও আচার আচরণেও তা ফুটে ওঠে । কথায়ও বলে, A man is not MAN until he takes the responsibilities of others. পুরুষ ততোক্ষণ পর্যন্ত পুরুষ হয় না, যতোক্ষন সে অন্যের দায়িত্ব ঘাড়ে না নেয়। আর এটা যতো তাড়াতাড়ি হবে, সমাজ জীবনেও ততো তাড়াতাড়ি দায়িত্বশীলতার প্রভাব পড়বে।

.

“হে আমার একান্ত নিজস্ব জগৎ, তাহলে বলো এবার, তোমার কি এখনও মনে হচ্ছে পেছনে ফেলে আসা কাজগুলো নিয়ে আমি চিন্তিত?”

In Audio: ReverbNation or SoundCloud

Abdullah Al Maruf

13-03-2020

Masaba, JP-2000


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.