একটুকরো অসমাপ্ত আত্মজীবনী

“দিল্লি পৌঁছালাম এবং সােজা রেলস্টেশনে হাজির হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ওয়েটিংরুমে মালপত্র রাখলাম। গােসল করে কিছু খেয়ে নিয়ে মালপত্র দারােয়ানের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। টিকিট কিনে নিয়েছি। রাতে ট্রেন ছাড়বে। অনেক সময় হাতে আছে। আমি একটা টাঙ্গা ভাড়া করে জামে মসজিদের কাছে পৌঁছালাম। গােপনে গােপনে দেখতে চাই মুসলমানদের অবস্থা। পার্টিশনের সময় এক ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল এই দিল্লিতে।। দেখলাম, মুসলমানদের কিছু কিছু দোকান আছে। কারও সাথে আলাপ করতে সাহস হচ্ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে লালকেল্লায় গেলাম। পূর্বেও গিয়েছি, হিন্দুস্তানের পতাকা উড়ছে। ভিতরে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মুসলমানদের অনেক দোকান ছিল পূর্বে, এখন দু’একটা ছাড়া নাই। বেশি সময় থাকতে ইচ্ছা হল না। বেরিয়ে আসলাম, আর একটা টাঙ্গা নিয়ে। চললাম এ্যাংলাে এ্যারাবিয়ান কলেজের দিকে, যেখানে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ কনভেনশনে যােগদান করেছিলাম।

নতুন দিল্লিও ঘুরে দেখলাম। নতুন দিল্লি এখন আরও নতুন রূপ ধারণ করেছে। ভারতবর্ষের রাজধানী। শত শত বৎসর মুসলমানরা শাসন করেছে এই দিল্লি থেকে, আজ আর তারা কেউই নাই। শুধু ইতিহাসের পাতায় স্বাক্ষর রয়ে গেছে। জানি না যে স্মৃতিটুকু আজও আছে, কতদিন থাকবে! যে উগ্র হিন্দু গােষ্ঠী মহাত্মা গান্ধীর মত নেতাকে হত্যা করতে পারে, তারা অন্য সম্প্রদায়কে সহ্য করতে পারবে কি না? এই দিল্লিতেই মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহেরু ও হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। খােদা শহীদ সাহেবকে রক্ষা করেছিলেন। নাথুরাম গডসের সহকর্মী মহাত্মা গান্ধী হত্যা মামলার সাক্ষী হিসাবে জবানবন্দিতে এই কথা স্বীকার করেছিল।

আমি রাতের ট্রেনে চড়ে বসলাম। আমার সিট রিজার্ভ ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে আরও তিনজন ভদ্রলােক ছিলেন। কারও সাথে আলাপ করতে সাহস হল না। একটা কাগজ নিয়ে পড়তে লাগলাম। তখনও ভারতবর্ষে মাঝে মাঝে গােলমাল চলছিল। তবে মহাত্মাকে হত্যা করার পর কংগ্রেস সরকার বাধ্য হয়েছিল সাম্প্রদায়িক আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার কর্মীদের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।” (১)


তথ্যসূত্র:
(১) শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী; পৃ. ১৪৪-১৪৫ (ঢাকা: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২য় মুদ্রণ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)
(২) অর্ণব সান্যাল (২০১৮), নরেন্দ্র মোদিকে চালায় কে? প্রথম আলো


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.