'দ্য প্লেগ' – আলবেয়ার কামু (Albert Camus)

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা যায়, এমন একটা বই বিশ্ব সাহিত্যে আছে। বইটার নাম ‘দ্য প্লেগ’ -লিখেছেন আলবেয়ার কামু ( Albert Camus) । অবরুদ্ধ একটি শহরে প্লেগ নামক ছোয়াচে রোগের আক্রমন, শহরবাসীর জীবনযাত্রা এবং তার পরিনতি নিয়েই এই বইয়ের কাহিনী। একই সাথে, রুপক অর্থে লেখক, প্লেগ রোগের সাথে হিটলারের পৃথিবীজয়ের নেশাকেও তুলনা করেছেন। ইদুরের পাল যেভাবে শহর থেকে শহরে প্লেগের জীবানু ছড়িয়ে দেয় , হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু দেকে আনে, তেমনিভাবে হিটলারের নাজি সেনাবাহিনী একের পর এক দেশ দখল করে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়।

আলবেয়ার কামুর জন্ম আলজেরিয়াতে .১৯১৩ সালে, যে বছর রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পান, ঠিক সেই বছর। তার বাবা ছিল ফ্রেঞ্চ, আর মা স্প্যানিশ। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান ১৯৬০ সালে, রোড এ্যক্সিডেন্টে । অনেকে অবশ্য তার মৃত্যুর পেছনে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা-কেজিবি’র ষড়যন্ত্র খুজে পান। মৃত্যুর ৩ বছর আগেই,১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন।

আলজেরিয়া তখন ছিল ফ্রান্স এর উপনিবেশ। দ্য প্লেগ গল্পের পটভূমিও হচ্ছে আলজেরিয়ার একটি বন্দর শহর- ওরান।

গল্পের সময়কাল হচ্ছে ১৯৪__ সাল। লেখক এভাবেই সালটা লিখেছেন বইতে, শেষ ডিজিটটা লিখেননি। ধারনা করা হয়, তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে হিটলারের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আক্রমনের ঘটনাটাই প্লেগ আক্রমনের সাথে তুলনা করেছেন । এ কারনে সালটার মধ্যেও একটা রহস্য রেখে দিয়েছেন ।

বইটা পড়তে থাকলে আপনি বর্তমান সময়ের কোভিদ-১৯ আক্রমনের সাথে পয়েন্টে পয়েন্টে, জয়েন্টে জয়েন্টে মিল খুজে পাবেন

গল্পের প্রথম দিকে আমরা দেখতে পাই, আলজেরিয়ার ওরান শহরে কিছুদিন প্রচুর ইদুর মরতে লাগল। প্রশাসন বেশি ভাবনা চিন্তা করল না , বলল ইদুর এমনেই মরতে পারে। ভয়ের কিছু নেই ।

কিছুদিন পরে ইদুর মরা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু এবার মানুষ মারা যেতে লাগল। মানুষদের শরীরে ফোড়ার মত উঠতে লাগল এবং সেগুলো ফেটে রক্ত বেরুতে লাগল । এই ধরনের ফোড়া বা গোটা হল প্লেগের লক্ষণ।

একজন-দুইজন করে মানুষ মরলেও শহরের মেয়রদের কোনো ভাবোদয় নেই। সবাই বললে, সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল ,টেনশনের কিছু নেই।

২০১৯ সালে এসেও আমরা কি দেখতে পাই? চীনের ডাক্তার লি ওয়েন লিয়াং প্রথম সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, নতুন এক ধরনের রোগ এসেছে দেশে, সেই রোগে অনেক মানুষ মারা যেতে পারে।

কিন্তু চীন সরকার লি ওয়েন লিয়াং কে জেলখানায় ঢুকালো–গুজব ছড়ানোর দায়ে। অনেক পরে , যখন করোনা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন অবশ্য চীনা সরকার ভুল স্বীকার করে সেই ডাক্তারকে মুক্তি দিয়েছিল।

উহান শহরে যখন ব্যাপক আকারে মানুষ মরতে লাগল, তখন সরকার নিউ ইয়ারের উতসব ক্যান্সেল করল , এবং করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিল।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও , শুরুতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হল না। চীনে আক্রমনের ২ মাস পরে বাংলাদেশে এসেছে এই ভাইরাস। ২ মাস পরেও সরকার উদাসীন ছিল। অবশেষে দেশে যখন একাধিক করোনা রোগী ডিটেক্টেড হল, তখন সরকার স্কুল বন্ধ করল, মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান কাট ছাট করল, কিন্তু ততক্ষনে বোধ হয় অনেক দেরী হয়ে গেছে।

ওরান শহরে ফিরে যাই। ৩০ জন প্লেগ রোগে মারা যাওয়ার পরে শহরের সরকার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারল। ৮০ বেডের নতুন একটা প্লেগ হাসপাতাল বানাল তারা তখন, কিন্তু সেই হাসপাতাল ৩ দিনেই ভর্তি হয়ে গেল ।

তারপর সংক্রমন এড়ানোর জন্য তারা শহরকে লকড ডাউন করে দিল । শহরের একমাত্র গেট তারা বন্ধ করে দিল ।

সেই আমলের ম্যাক্সিমাম শহরের মতই ,পুরা শহরটা উচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল, একটি মাত্র গেট ছিল ভেতরে ঢোকা বা বের হওয়ার জন্য । এই রকম দেয়াল দেওয়া হত বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে শহর রক্ষা করার জন্য।

সেই অবরুদ্ধ ওরান শহরে আটকা পড়া বিভিন্ন কিসিমের আজব আজব মানুষ আর তাদের আজব আজব কর্মকান্ড নিয়েই পুরা বইটা এগিয়েছে।

পুরা গল্পটা এক বছরের ও কম সময়ের। এপ্রিল মাস থেকে পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ের।

গল্পের মূল চরিত্র হল ডাক্তার রিও । নিজের জীবনের ভয় তুচ্ছ করে তিনি প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের সেবা করে গেছেন । শুধু চিকিতসা নয় , তাকে পলিটিক্স ও সামলাতে হয়েছে। তার কাজের জন্য তাকে শত্রু হতে হয়েছে শহরের মেয়র আর পাদ্রীর সাথে ।

লকড দাউন অবস্থাতেই তিনি খবর পান, তার স্ত্রী নিকটবর্তী আরেক শহরে মারা গেছে ( শহরের গেট বন্ধ থাকলেও চিঠি পত্র আদান প্রদান চলত। এখন যেমন ইন্টারনেট সচল আছে সব জায়গায়,সেইরকম)। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য শোক করার কোনো সময় পাননি তিনি। বেচে থাকা মানুশদের জন্য লড়াইয়ের পিছনেই তিনি তার বেচে থাকা প্রতিটি মুহুর্ত ব্যয় করতে চাইলেন।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আপনি ডাক্তার রিওকে তুলনা করতে পারেন ডাক্তার ওয়েনলিয়াং বা মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা, কিংবা বিভিন্ন দেশে করোনার সাথে যুদ্ধরত হাজার হাজার ডাক্তারের সাথে 🙂

আরেক ক্যারেক্ট্র হল রেমন্ড । একটা নিউজপেপারের সাংবাদিক। নিউজ কভার করার জন্য ওরান শহরে এসেছিল, এখন আটকা পড়ে গেছে । তার গার্লফ্রেন্ড আছে বাইরে। সে যে কোনো উপায়ে চাচ্ছিল এই শহর থেকে বের হয়ে গার্লফ্রেন্ডের কাছে চলে যাইতে । কিন্তু কোনো সিস্টেম নাই।

এক পর্যায়ে সে অবৈধ চোরাচালনীর পথ খুজে পেল। ইন্ডিয়া -বাংলাদেশ বর্ডারে যেভাবে গরু পাচার বা ক্ষেত্র বিশেষে মানব পাচার করা হয় , সেইরকম একটা সিস্টেমে সে শহরের প্রাচীর পার হয়ে বের হয়ে যাওয়ার সিস্টেম খুজে পেল। স্মাগলার দলের এজেন্টের কাছে সে এ্যাডভান্স টাকাও দিয়ে দিল । সবকিছু যখন ঠিকঠাক, তখন সে বেকে বসল।

বলল, আমি ওরান বাসীকে এই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজের সুখের জন্য শহর ছেড়ে চলে যেতে পারিনা। এই শহরবাসীর সাথে আমিও যুদ্ধ করব।

তারপর সে বাইরে যাওয়ার প্লান ত্যাগ করে ডাক্তার রিওর সাথে প্লেগ রোগীর সেবা করতে লাগল।

একটা বুড়ো ক্যারেক্টার ছিল, নাম ভুলে গেছি । প্লেগ আসার আগে ,তার রেগুলার রুটিন ছিল — একা একা ব্যালকনিতে বসে, কাগজ ছিঁড়ে নিচে ফেলা। ধীরে নেমে আসা কাগজের টুকরোগুলো খাবার ভেবে ছুটে আসতো একদল বিড়াল। সেই বুড়ো তখন থুঁ থুঁ ছিটাতো বিড়ালগুলোর দিকে। আর বিড়ালদের ঠকাতে পেরে, হাসিতে ফেটে পড়তো।

কিন্তু এখন প্লেগের আক্রমণে বিড়ালগুলো মৃত‌্য হয়েছে। আজ আর কাগজ ছিটালেও কেউ আসে না। বৃদ্ধটিরও কোন কাজ নেই। তাই বিষন্ন বসে থাকে ব্যালকনিতে।

ওথন এবং তার ছেলের গল্প আছে এখানে। তাদের দুইজনেরই প্লেগ হয়েছিল, দুই জনকেই কোয়ারেন্টিন শিবিরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। ওথনের বাচ্চার উপরে প্লেগের টীকা এপ্লাই করা হল, পরীক্ষামূলকভাবে । কিন্তু বাচ্চাটা বাচল না ,মারা গেল ।

তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে মা ওথন সূস্থ হয়ে গেল। কিন্তু সে কোয়ারেন্টিন শিবির থেকে বের হতে চাইল না। সে ভলান্টিয়ার হিসেবে ওখানেই কাজ করে যেতে চাইল। তার যুক্তি, আমি এখানে থেকে বের হলেই আমার বাচ্চার কাছ থেকে দূরে চলে যাব। কিন্তু আমি এখানে থাকলেই আমার বাচ্চার কাছাকাছি থাকতে পারব ।

গ্রান্ড নামে একজন ‘সাহিত্যিক এর সাথে পরিচয় হয় আমাদের, যিনি প্রতিদিন তার জীবনের একমাত্র উপন্যাসের প্রথম লাইনটা কাটাকুটি করে নতুন ভাবে লিখেন। কিছুতেই তিনি পারফেক্ট স্টার্টিং পাচ্ছেন না। প্লেগ আক্রমনের সময় তিনি ডাক্তার রিওর ভলান্টিয়ার টিমে যোগ দেন, মৃত্যুর সাথে লড়াই করেন, এবং মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে নভেল লেখা শুরু করেন ।

সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার হচ্ছে গীর্জার পাদ্রী, ফাদার প্যানালু। প্লেগ শুরু হলে তিনি একটা জনসভা ডেকে বলেন , ‘পৃথিবী যখন পাপে পূর্ণ হয়, তখন ঈশ্বর প্লেগ রোগ দিয়ে মানুষকে পরিশুদ্ধ করে।ভাই সব, আপনারা আজ দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন হয়েছেন, এবং এ দুর্ভাগ্য আপনাদের প্রাপ্য।”

কয়েক মাস পরেই ফাদারের কথার টোন চেঞ্জ হয়ে যায়। তিনি তার বক্তব্যে ‘আপনারা’ ব্যবহার করতেন না, বলতেন ‘আমরা’ । ”আপনারা দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন” না বলে বলতেন ”আমরা দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন”।

শেষের দিকে তিনি পুরা ১৮০ ডিগ্রি টার্ন নেন । আখেরী এক জনসভা ডেকে বলেন, ” অজস্র নিষ্পাপ শিশুকে আমি যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মরতে দেখেছি, এই সব বেদনাতুর শিশুদের মুখে আমি কোন পাপ দেখি নি। এসব নিষ্পাপ শিশুদের কষ্ট দেখে, আমার কাছে দু’টি পথ ছিল। এক, আমার চোখ দু’টি উপরে ফেলা। যা আমি পারি নি। দুই, আমার ঈশ্বর বিশ্বাস পরিত্যাগ করা। সমবেত সবার সামনে, আমার ঈশ্বর বিশ্বাস পরিত্যাগ করলাম।”

এরপরে তিনি মানব সেবার জন্য ডাক্তার রিওর ভলান্টিয়ার টিমে যোগ দিলেন। কিছুদিন কাজ করার পরে সেখানে তিনি প্লেগ ,বা প্লেগ সদৃশ এক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন।

গল্পের প্রথম দিকে, এপ্রিল মাসে যখন মানুষ মারা শুরু হল, তখন মৃতদের নিকটাত্মীয়রা অনেক বেশি শোক করত।কান্নাকাটি, আজাজারি,বা ফিউনারেল পার্টি হত অনেক জাকজমক করে।

যত বেশি মানুষ মরতে লাগল, সাথে সাথে আত্মীয় স্বজনদের শোক কমে যেতে লাগল। মৃতদেহ সতকারের টাইম কমতে লাগল। ২ ঘন্টার প্রোগ্রাম কাটছাট করে ৫ মিনিটে শেষ হতে লাগল। মানুষের শোকের বহিঃপ্রকাশ ও কমে যেতে লাগল।

একটা সময় বদ্ধ শহরে থাকতে থাকতে মানুষ পাগলের মত হয়ে যেতে লাগল। প্লেগের ভয় না করেই তারা শহরের রেস্টুরেন্ট, বার বা বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত হতে লাগল। ছিনতাই,চুরি,ডাকাতি এবং ভায়োলেন্স ও হতে দেখা গেল কয়েক জায়গায়।

সৌভাগ্যবশত, জানুয়ারির শেষ দিকে প্লেগ তার ক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে বিদায় নিতে লাগল। আক্রান্ত রোগীরা একে একে সূস্থ হতে লাগল । নতুন প্লেগ রোগী আর পাওয়া গেল না।

লক্ষ্যনীয় যে, আলবেয়ার কামু কিন্তু দেখান নি যে মানুষের আবিষ্কৃত ওষুধ প্লেগ কে হারিয়ে দিয়েছে। বরং তিনি দেখিয়েছেন, প্লেগ একসময় নিজেই চলে গেছে এলাকা ছেড়ে। সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি তিনি বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে দেখব, হিটলার ইউরোপ দখল করতে করতে রাশিয়াতে এসে থমকে গেল। রাশিয়ান সৈন্যরা তাকে হারাতে পারেনি। হিটলারের নিজের লোভের কারনেই তার সৈন্যরা মরেছিল। সাপ্লাই লাইন রেডি না করে রাশিয়ার অনেক বেশি ভেতরে চলে আসার কারনেই তিনি হেরে গিয়েছিলেন রাশিয়া ফ্রন্টে।

১৯৪৫ সালে হিটলারের পতন হয়। তিনি বাংকারের ভিতর সুইসাইড করেন। বার্লিনে ইংলিশ এবং রাশিয়ান সৈন্যরা মিত্র বাহিনীর পতাকা উরিয়ে দেয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আনন্দে বিভিন্ন শহরে বড় বর উতসবের আয়োজন করা হয়।

ওরান শহরের প্রধান গেট ও ফেব্রুয়ারি মাসে খুলে দেওয়া হয়। গেট খোলা উপলক্ষে শহরবাসী এক বিরাট বড় পার্টির আয়োজন করে। গল্পটা শেষ হয়েছে এই পার্টির উতসবের মধ্যেই । গল্পের শেষ প্যারাগ্রাফটা এইরকম —

“দূর থেকে ভেসে আসা তুমুল হর্ষধ্বনি শুনতে শুনতে মনে হল, মানুষের এই উল্লাস হয়তো আবার একদিন বিপন্ন হবে, কারণ প্লেগের জীবাণু কখনোই পুরোপুরি ধ্বংস হয় না, হারিয়েও যায় না চিরতরে। বছরের-পর-বছর এই জীবাণু লুকিয়ে থাকে আসবাবপত্র আর কাপড়চোপড়ের মধ্যে, অপেক্ষা করে শোবার ঘরে, ভাঁড়ারে, বুকশেলফে। তারপর সেই দিনটি আসে যেদিন এই জীবাণু মানুষের সর্বনাশের জন্য আবার ইঁদুরগুলোকে জাগিয়ে উত্তেজিত করে মরবার জন্য, এবং ঝাঁকে ঝাঁকে ওদেরকে পাঠিয়ে দেয় আনন্দমুখর কোনো শহরে।”

আলবেয়ার কামু ছিলেন দর্শনের স্টুডেন্ট। অস্তিত্ত্ববাদী দার্শনিক হিসেবে তার পরিচিত রয়েছে। একই সাথে তার লেখায় এ্যাবসার্ডিটি পান অনেকে। দ্য প্লেগ এর শেষ লাইন গুলো দিয়ে তিনি সম্ভবত হিটলার, বা যে কোনো স্বৈরাচারের পুনরায় উত্থানের সম্ভাবনা বুঝিয়েছেন , বিশ্বের যে কোনো দেশে ,যে কোনো সময়ে।

তবে আলবেয়ার কামুর অন্য সব সাহিত্য যদি দেখি ,তাহলে তিনি প্রকৃতি বা নিয়তির বিরুদ্ধে মানুশের সংগ্রামে তিনি সবসময় মানুশকে বিজয়ী দেখতে চেয়েছেন। নিজের অস্তিত্ত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই মানুষ লরাই করবে, তার অন্য সব কাজকর্ম যতই অযৌক্তিক হোক না কেন। দ্য প্লেগ গল্পের মহানায়করাও শেষ পর্যন্ত লড়ে প্লেগের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে। এই জয় শুধু ডাক্রার রিওদের ৪/৫ জনের জয় নয়, বইয়ের প্রতিতা পাঠক অনুভব করেন, এই জয় তার। আপনার, আমার, প্রতিটা মানুষের জয় মানবজাতির এই হুমকির বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে কভিড এর দিনগুলাতে, প্রায় কোয়ারেন্টিন অবস্থাতে এই বই যথেষ্ট সুখপাঠ্য। তবে নিকট ভবিষ্যতে আরো কয়েক দিন বা আরো কয়েক সপ্তাহ যদি একটানা বাসার মধ্যে থাকতে হয়, তাহলে ওরান বাসীদের সিচুয়েশন আরো ভালভাবে বুঝতে পারব। ওদেরকে তখন একেবারে আপন জন মনে হবে ।


কিছু সহায়ক তথ্যসূত্র-

আলবেয়ার কামুর উইকিপিডিয়া পেজ https://en.wikipedia.org/wiki/Albert_Camus

দ্য প্লেগ এর উইকি পেজ https://en.wikipedia.org/wiki/The_Plague

দ্য প্লেগ (বাংলা) ডাউনলোড


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.