The Alchemist

বই : দি আলকেমিস্ট

লেখক : পাওলো কোয়েলহো

অনুবাদক : মুহাম্মদ ফুয়াদ আল ফিদাহ

পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৫৭

প্রকাশনা : চিরকুট প্রকাশনী

” মানুষ যখন সর্বান্তকরণে চায় কিছু পেতে , মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা যোগসাজশে লেগে পড়ে সেই চাহিদা মেটাতে ” সত্যিই কি তাই!?

.

মানুষের দেখা স্বপ্ন কি নিছকই ঘুমের ঘোরে দেখা

অর্থহীন কোন স্বপ্ন!? নাকি সে স্বপ্নের অন্দরে গচ্ছিত থাকে মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তার দাসের জন্য জীবনের লক্ষ্য বেছে নেয়ার ইঙ্গিত। নাকি মহান স্রষ্ঠা আমাদের সাথে স্বপ্নের ভাষায় কথা বলেন!? আমাদেরকে পথ দেখান!। আমরা কি কখনো বুঝার চেষ্টা করেছি আমাদের অন্তরাত্মার কথা!? আমরা অনেকসময় বুঝতে পারি না এ জগতে আমাদের লক্ষ্য কি!? আমরা পরাজিত হবার আগে ভাবি না আমাদের লক্ষ্য নিয়ে!। আবার কখনো এই পরাজয় আমাদেরকে লক্ষ্য চিনতে সাহায্য করে!। স্বপ্নকে ছুঁতে হলে ভাঙ্গতে হয় হাজারো রুদ্ধ দ্বার, পাড়ি দিতে হয় অতল গভীর সমুদ্র আর উত্তপ্ত মরুভূমি, বুঝে নিতে হয় বৈশ্বিক ভাষা, চিনতে হয় লক্ষণ, ত্যাগ করতে হয় দেশ, মায়া, ভালোবাসা! ।

রিভিউ :

ঠিক এমনই ছিলো আন্দালুসিয়ার রাখাল বালক সান্তিয়াগোর কাহিনী। পরিবারের স্বপ্ন ছিলো, ছেলে হবে গির্জার যাজক কিন্তু বালক চেয়েছে সে হবে পৃথিবী পরিব্রাজক। মা-বাবাকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক পাল ভেড়া এবং কিছু বই সঙ্গী করে। আন্দালুসিয়ার এই মরূভূমি থেকে ওই মরুভূমি চড়ে বেড়াতে বেড়াতে দেখতে থাকে এই ভূমণ্ডল।

সকাল সন্ধা মরূভূমিতে ভেড়ার পাল চড়িয়ে চড়িয়ে পৃথিবীটা দেখা এবং লাইব্রেরীর বইগুলো পড়েই নিজের জীবনটা খুব সুন্দর কাটছিলো বালকের। অবশ্য এই জীবন থেকে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখেছে বালক । জীবন চলছিলো জীবনের মত কিন্তু আচমকা, অল্প কয়েকদিন ধরে একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে রাখাল বালকের। দেখছে যে, ঘুমিয়ে আছে একটি মাঠে, মেষপাল সঙ্গে করে। হঠাৎ একটি বাচ্চা এসে খেলতে শুরু করে পালের সঙ্গে। ব্যাপারটা তার পছন্দ না হলেও বাধা দেয়না মেয়েটিকে। কিছুক্ষণ পর ছোট্ট মেয়েটি তার হাত ধরে মিশরের পিরামিডে নিয়ে গিয়ে বলে “এখানে যদি আসো, তাহলে গুপ্তধন পাবে”। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মেয়েটি তাকে গুপ্তধনের জায়গাটি দেখানোর আগেই বালকের ঘুম ভেঙে যায়!। স্বপ্নটিও সাধারণ কোন স্বপ্ন নয়, একবার দেখেই যে ক্ষ্যান্ত তাও না বরং দু-দুবার দেখেছে একই স্বপ্ন। হঠাৎ মনে আসে, তারিফায এলাকায় বাস করে একজন জিপসি বৃদ্ধা, স্বপ্নের তা’বিরে যার জুড়ি নেই অন্তত এই শহরে। চলে গেলে বৃদ্ধার কাছে!। বৃদ্ধা জানালো, “মিশরের পিরামিডের কাছে রয়েছে একটি গুপ্তধন যেই গুপ্তধনের খোঁজে তাকে বের হতে হবে এবং সেই গুপ্তধন তাকে করে তুলবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী”।

স্বপ্নের তাবির শুনে বালক স্বপ্নের প্রতি তার আগ্রহ যেন হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে সময়টা একেবারেই ভেস্তে গেলো।খেটে খাওয়া একজন রাখাল বালক উত্তপ্ত মরুভূমি পাড়ি দিয়ে পিরামিডে পৌছে খুঁজে আনবে গুপ্তধন তারপর সে হয়ে যাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী। এরকম গল্প তো শুধু বইতে পড়াই সহজ কিন্তু বাস্তবতা যে কত নির্মম। এসব ভাবতে ভাবতেই কাজে মন দিলো বালক!। শতচেষ্টার পরেও মন থেকে দূর করতে পারছে না রাতের স্বপ্নের কথা, সাথে আবার যুক্ত হয়েছে বুড়ির তা’বির । কোথায় যেন পড়েছিলো

” স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকৃতি মানুষকে ভবিষ্যৎ জানিয়ে দেয়”, তাই বুড়ির কথাগুলো ফেলে দিতে পারছে না একেবারে। বালক ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো অনিশ্চয়তা আর সংশয়ের দোলাচলে । কতজনই বা পারে এই সংশয়ের বাধা পেড়িয়ে, নিজের লক্ষ্য পানে এগিয়ে যেতে!? । বালকের বেলায় হয়তো সবার মত ভাগ্যই অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু ঠিক ওই সময় তার সামনে আবির্ভাব ঘটে সালেমের রাজার!। যার কাজ হচ্ছে, তিনি সবমসয় ওইসব মানুষের সামনে হাজির হন যারা নিজেদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়ার আশা বুকে লালন করে। তাদের সম্মুখে উপস্থিত হন তাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে আর আজ রাজা এসেছে বালকের কাছে। আর সে জানে বালকের অতীত, জানে বালকের সেই স্বপ্নের কথা। আরও জানে বালকের ভবিষ্যতও!। তিনি জানেন, বালক চাইছে তার লক্ষ্য ছুঁয়ে দেখার জন্য অথচ ভয় আর সংশয় তাকে আটকে রেখেছে তাই বালককে তার লক্ষ্য অর্জনের পথে দূরবান গতীতে এগিয়ে যাবার সাহস যোগিয়ে পাঠিয়ে দেন মিশরে আর সাথে উপহার হিসাবে দুটি মূল্যবান পাথর।

বালক বেরিয়ে পড়লো পিরামিডের খোঁজে যেখানে আছে তার স্বপ্নের গুপ্তধন কিন্তু মিশরের পিরামিডে পৌছা কি এতই সহজ ছিলো বালকের জন্য!? তবে মনে রাখতে হবে!! মানুষ যখন সর্বান্তকরণে চায় কিছু পেতে , মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা যোগসাজশে লেগে পড়ে সেই চাহিদা মেটাতে ” সত্যিই কি তাই!?

.

পথে পথে উঁকি দেয় বিপদের দানবেরা। নিভিয়ে দিতে চায় স্বপ্নের প্রদীপ। এসব বাধা-বিপত্তিকে জয় করার রোমাঞ্চকর উপাখ্যান নিয়েই “দি আলকেমিস্ট “।

.

” দি আলকেমিস্ট ” বইটি বিশ্ব নন্দিত, কালজয়ী একটি গ্রন্থ যেটা বইপাড়ার সবাই মোটামুটি জানেন।

“দি আলকেমিস্ট ” কে পাঠকের কাছে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার মত হয়তো প্রয়োজন নেই।

বিশ্বখ্যাত দার্শনিক ব্রাজিলের পাওলো কোয়েলহো এই বইয়ের মাধ্যমে তার জাত চিনিয়েছেন সবাইকে। তারপর আরো অনেক অনবদ্য গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন।

.

বাংলাদেশে “দি আলকেমিস্ট” বইয়ের অনুবাদ অনেক আগেই করা হয়ছে এবং ডজনখানেক অনুবাদ বাজারে আছে মনে হয় কিন্তু সেসব অনুবাদের থেকে সবাই ইংলিশ অনুবাদকেই আরো উপভোগ্য মনে করতো। কিন্তু চিরকুট থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ ফুয়াদ আল ফিদাহ ভাইয়ের

“দি আলকেমিস্ট”র অনুবাদ পাঠকের চাহিদা পূরণে নিরাশ করবে না এটা জোরালোভাবে বলা যেতেই পারে ।

.

করোনার এই ক্রাইসিসের সময় হালের বড় বড় লেখকেরা নিজেদের উদারতার পরিচয় দিয়ে তাদের বইগুলা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যেমন : জে কে রাওলিং, নিল গেইম্যান আরো অন্যান্য।

বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কথা চিন্তা করে চিরকুট প্রকাশনীও তাদের তাদের তালিকার সেরা দুটি বই পাঠকের জন্য পিডিএফ আকারে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে ” দি আলকেমিস্ট ” মুহাম্মদ ফুয়াদ আল ফিদাহ অনূদিত এবং “জাদুকর ” বাই মুশফিক উস সালেহীন । তাই কালক্ষেপণ না করে লুফে নিতে পারেন এই সূবর্ণ সুযোগ।

( আমি অবশ্য হার্ডকপিই পড়েছি ” দি আলকেমিস্ট”)

#ঘরে_থাকুন

#সুস্থ_থাকুন

হ্যাপি রিডিং 😑


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.